Wednesday 26 August 2020

ছবি, চ্যাট এবং একটি ফোন : পাহাড়প্রমাণ বাধা টপকে কীভাবে পুলওয়ামা মামলার চার্জশিট দাখিল করল NIA?

 

Pulwama attack terror


পুলওয়ামা হামলার বড় মাথা ছিল মাসুদ আজহারের ভাইপো মহম্মদ উমর ফারুক, পাকিস্তানি জঙ্গি কামরান আলি এবং কারি ইয়াসিররা। হামলার কয়েকদিনের মধ্যেই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে তাদের নিকেশ করা হয়েছিল। তার জেরে পুলওয়ামা কাণ্ডের ঘটনাক্রম সাজানোর সময় প্রথম ১০ মাস বাধার সম্মুখীন হয়েছিল জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)।


গত বছর ২৯ মার্চ ফারুককে খতম করা হলেও কয়েক মাস ধরে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের কাছে তার ফোন পড়েছিল। অবশেষে গত ডিসেম্বরে প্রথম আশার আলো দেখতে পায় তদন্তকারী সংস্থা। নাম গোপন রাখার শর্তে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ফারুকের মোবাইল থেকে অসংখ্য ভিডিয়ো, ছবি এবং কথোপকথন পাওয়া যায়। সীমান্ত পেরিয়ে পাকিস্তান থেকে ভারতে আসা, নিজের সঙ্গী এবং বোমা তৈরির প্রক্রিয়ার একাধিক ছবিও তুলেছিল মাসুদের ভাইপো। সেই সময় হোয়্যাটসঅ্যাপ-সহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে জইশ-ই-মহম্মদের নেতৃত্বের সঙ্গে কথোপকথন উদ্ধার করা হয়। পাকিস্তানে মূলত কাকা আবদুল রউফ আসগার, আম্মার আলি-সহ কাশ্মীর উপত্যকার অন্যান্য জঙ্গিদের সঙ্গে বলত ফারুক

শীঘ্রই ফারুকের ফোন থেকে এক কাশ্মীরি যুবকের ছবি পায় ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজি) অনিল শুক্লা, ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) সোনিয়া নারাং এবং পুলিশ সুপার রাকেশ বালোয়ালের নেতৃত্বাধীন তদন্তকারী দল। জানা যায়, শাকির বশির ম্যাগরে নামে বছর ২৪-এর ওই যুবক পুলওয়ামার কাকাপোরার বাসিন্দা। তারপরই এনআইএ বুঝতে পারে, সংস্থার হাতে বড়সড় সূত্র এসেছে।


পুলওয়ামার বিস্ফোরণস্থলের কাছেই শাকির একটি করাতকল চালাত এবং সিআরপিএফের কনভয়ের উপর নজরদারি চালিয়েছিল। একইসঙ্গে হামলায় যে বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছিল, তা মজুত রাখা হয়েছিল তার বাড়িতেই। সেখানেই তৈরি করা হয়েছিল বোমা। চলতি বছর ২৮ ফেব্রুয়ারি তাকে গ্রেফতার করা হয়।


সেইসব তথ্য জোগাড়ের পাশাপাশি ফারুকের কথোপকথন পুনরুদ্ধারের কাজ চালাতে থাকে এনআইএ। তাতে জানা যায়, গত বছর ফেব্রুয়ারির শেষলগ্নে যখন আকাশে ‘ডগ ফাইট’-এ জড়িয়েছিল ভারত ও পাকিস্তান, তখন ফারুক বলেছিল ‘দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ হওয়া উচিত।’ আর সেই পরিস্থিতির সুযোগ শয়ে শয়ে জইশ জঙ্গি ভারতে অনুপ্রবেশ করতে পারবে। এছাড়াও এনআইয়ের হাতে আসা কথোপকথন অনুযায়ী, পুলওয়ামার পর আরও একটি হামলা চালানোর জন্য পাকিস্তান থেকে ফারুকের কাকা নির্দেশ দিতে থাকে। যদিও পাকিস্তানের উপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই পরিকল্পনা বাতিল করা হয়েছিল।

এরইমধ্যে পাকিস্তানের অ্যালায়েড ব্যাঙ্ক লিমিটেড এবং মিজান ব্যাঙ্কে ফারুকের দুটি অ্যাকাউন্টেরও হদিশ পান তদন্তকারী। পুলওয়ামায় হামলা চালানোর জন্য ওই দুটি অ্যাকাউন্টেই অর্থ জমা পড়েছিল। অর্থ ট্রান্সফার সংক্রান্ত কথোপকথনও জোগাড় করে এনআইএ। ফারুকের ফোন থেকে উদ্ধার হওয়া সেলফি, ছবি এবং কথোপকথনের উপর ভিত্তি করে সন্ত্রাসবাদী হামলার ষড়যন্ত্রে পাকিস্তানের যোগের বিষয়ে অকাট্য প্রমাণ পায় তদন্তকারী সংস্থা।


অন্যদিকে, শাকিরকে জেরা করে হামলা চালানোর ষড়যন্ত্রের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য হাতে আসে। ফারুক কীভাবে পুরো হামলার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করছিল ও তাদের নির্দেশ দিচ্ছিল, তাও জানতে পারেন তদন্তকারীরা। হামলার পরবর্তী কয়েক মাসে ইনশা জান, তার বাবা পীর তারিক আহমেদ শাহ, ওয়েইজ-উল-ইসলাম, মহম্মদ আব্বাস রাথের, মহম্মদ ইকবাল রাথের এবং বিলাল আহমেদ কুছেরিকে গ্রেফতার করা হয়। তারা পাকিস্তানি জঙ্গিদের থাকার জায়গা দেওয়া বা অন্যান্য সাহায্য জুগিয়েছিল। এনআইএ জানিয়েছে, আত্মঘাতী জঙ্গির যে প্ররোচনামূলক ভিডিয়োর রেকর্ডিং করা হয়েছিল ইশার বাড়িতে।

সেইসবের ভিত্তিতেই একসময়ে কার্যত পাহাড়প্রমাণ বাধার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এনআইএ মঙ্গলবার ১৩,৫০০ পাতার চার্জশিট দাখিল করেছে, তাও তদন্তভার গ্রহণের ১৮ মাসের মধ্যে। তদন্তকারী সংস্থার ডেপুটি ইন্সপেক্টর বলেন, ‘ওই  কাপুরুষোচিত এবং বর্বর হামলার বিরুদ্ধে জোরদার মামলা তৈরি করার জন্য  অনেক ডিজিটাল, ফরেনসিক, তথ্যমূলক এবং মৌখিক প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। ভারতে সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানো ও কাশ্মীরি যুবকদের প্ররোচিত করার জন্য পাকিস্তানের বিভিন্ন সংস্থার সম্পূর্ণ যোগ চার্জশিটে ঠাঁই পেয়েছে।’

ফারুক ও জইশের অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে তথ্য চেয়ে এনআইএ শীঘ্রই পাকিস্তানকে ‘লেটার রোগাটরিজ’ পাঠাবে। ‘লেটার রোগাটরিজ’ হল বিদেশ থেকে তথ্য চাওয়ার বিচারবিভাগীয় আর্জি।

Disqus Comments