কলকাতা: বাংলার কন্টেইনমেন্ট জোনে লকডাউন চলবে গোটা জুলাই মাসই। বাকি সর্বত্র বাড়বে ছাড়ের পরিমাণ। তবে লোকাল ট্রেন ও মেট্রোর চাকা গড়াবে না আগামী মাসেও। ৩০ জুন শেষ হচ্ছে ‘আনলক-১’ পর্ব। এই পর্বে বিধিনিষেধ শিথিল হয়েছে ঠিকই, কিন্তু লকডাউন ছিল কন্টেইনমেন্ট জোনগুলিতে। মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে কথা বললেও আনলকের দ্বিতীয় দফা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি নরেন্দ্র মোদি সরকার।
তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুধবারই ঘোষণা করে দিলেন, রাজ্যে লকডাউন বাড়ছে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। সারা দেশে সংক্রমণ যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই। বুধবার নবান্নে ১১টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে সংক্রামক এলাকার বাইরে বেশ কিছু বিধি শিথিল করেছে রাজ্য সরকার। জুলাই মাসে তা বজায় রেখে আরও কিছু ছাড় দেওয়ার কথা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সরকারি সূত্রে অবশ্য জানা গিয়েছে, জুলাইতে বাস-ট্রাম সহ অন্যান্য পরিবহণ বাড়ানোর উপরেই জোর দেওয়া হবে। তবে ভাড়া না বাড়িয়েই। এব্যাপারে বেসরকারি বাসমালিকদের কাছে আর্জিও জানানো হবে। কিন্তু লোকাল ট্রেন ও মেট্রো চালানো যাবে না।
দোকানপাট, অফিসে আরও কর্মী আনার ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে কন্টেইনমেন্ট জোনে আগের মতোই কড়াকড়ি থাকবে। স্কুল-কলেজও বন্ধ থাকছে। শুধু উচ্চ মাধ্যমিকের বাকি থাকা তিনটি পরীক্ষা হবে। সেব্যাপারে পরে ঘোষণা হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
ঘূর্ণিঝড় উম-পুনে ক্ষতিপূরণ নিয়ে কেন্দ্রের টালবাহানা এবং ত্রাণে দলবাজি রুখতেও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। সাড়ে তিন ঘণ্টার ওই ম্যারাথন বৈঠকে গঠন করা হয়েছে একটি সর্বদলীয় কমিটিও। যারা উম-পুন পরবর্তী পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে পুনর্গঠনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। তার ভিত্তিতে পরবর্তী কাজ হবে।
কমিটির মাথায় রয়েছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। থাকছেন সমস্ত বিরোধী দলের প্রতিনিধিরা। মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘ক্ষতিপূরণ পাওয়া থেকে কেউ বঞ্চিত হলে বিডিও, জেলাশাসক বা স্থানীয় থানার কাছে আবেদন করুন। ত্রাণ নিয়ে দলবাজির কোনও জায়গা নেই। আমি নিজে চার জনকে দল থেকে তাড়িয়েছি। ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজেদের লোককে সুবিধা পাইয়ে দেবেন না।’ জেলাশাসক, বিডিওদের এক সপ্তাহের মধ্যে সত্যিকারের ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। ত্রাণ না পাওয়া প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে তাঁর আর্জি, বিডিও অফিস ভাঙচুর করবেন না। ক্ষোভ থাকলে জানান। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা বিডিও অফিসে টাঙানো হবে।
বৈঠকে উঠে এসেছে সুন্দরবনে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের বিষয়টিও। মমতা জানান, উম-পুনে সুন্দরবনের অনেক ক্ষতি হয়েছে। তা নিয়ে কমিটিকে প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। নীতি আয়োগকেও চিঠি দেওয়া হবে। ওই এলাকায় যাবতীয় সমস্যার স্থায়ী সমাধানের বিষয়ে একটা মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যের স্বার্থে সকলকে এক সুরে কথা বলার অনুরোধও করেছেন।
এদিনের বৈঠকে মূল আলোচ্য বিষয় ছিল রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। বৈঠকের শুরুতে সংক্রমণের জেরে প্রয়াত বিধায়ক তমোনাশ ঘোষের স্মৃতিতে নীরবতা পালন করেছেন সব রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা। সংক্রমণের চিকিৎসা পদ্ধতি এবং বেসরকারি হাসপাতালগুলির অবস্থা নিয়ে একাধিক অভিযোগ করেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীর মতো বাম নেতারা। পরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই প্রসঙ্গে মমতা বলেন, করোনা যাতে ছড়িয়ে না পরে সেবিষয়ে প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে। কোভিড রোগীদের বিষয়ে আরও বেশি নজর দেওয়া হবে। হাসপাতালগুলিকে করোনা আক্রান্ত এবং অন্যান্য রোগীদের না ফেরানোর ব্যাপারেও কড়া সুর শোনা গিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গলায়। জানিয়েছেন, কোনও ভাবেই চিকিৎসার খরচ বাড়ানো যাবে না। এব্যাপারে কোনও নড়চড় হলে চড়া মূল্য চোকাতে হবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মুখ্যসচিবকে যার নির্দেশিকা জারির আদেশ দিয়েছেন তিনি।
বৈঠকে সমস্ত বিরোধী দলের নেতারাই সংক্রমণ রুখতে সরকারের কাজে সাহায্য করার আশ্বাস দিয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী জানান। বৈঠক উপলক্ষে এই প্রথম নবান্নে এসেছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। পরে তিনি জানান, বিজেপির উপর পুলিসের অত্যাচার, ত্রাণ দিতে না দেওয়ার বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর নজরে এনেছি। তবে সর্বদলীয় কমিটি নিয়ে আশাবাদী তিনিও। বামফ্রন্টের চারটি দল, কংগ্রেস, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা, এসইউসিআই, বহুজন সমাজ পার্টির মতো দলগুলির পক্ষ থেকেও উদ্যোগকে সাধুবাদ জানানো হয়েছে